আমাদের পরবর্তী সংখ্যায় লেখা পাঠাতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ এ ইনবক্স করুন অথবা ইমেইল করুন Ghuri2014@hotmail.com এই ঠিকানায়।

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

গ্রীষ্ম বন্দনা - আহসান হাবিব (১ম সংখ্যা)



কোকিলের গান কার না ভালো লাগে!
কিন্তু সবকিছু চিরস্থায়ী নয় বলে কুহ কুহ ধ্বনি যতই আপনার হৃদয়কে উদ্বেলিত করুক বসন্তের পরে তা আর শোনা যায় না। কাননের কচি পত্র-পল্লব গাঢ় সবুজাভ হয়ে পূর্ণাঙ্গতা পেলে, চৈত্রের কাঠফাটা রোদে কৃষকের মাঝে চৈতালি ফসল তোলার হিড়িক পড়লে আর ঈশান কোণ থেকে আসা ঝাপটা বাতাস যখন অতিথির মত দরজায় কড়া নাড়ে তখন বুঝতে হবে প্রকৃতির আলয়ে গ্রীষ্ম নামে চিরচেনা মেহমান নবরূপে হাজির হয়েছে।

বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রীষ্মঋতুর আমেজ অনুভূত হয়। এই নিদাঘ কালের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য আর উপাদান নিয়ে বহু কবি-সাহিত্যিক তাঁদের ভান্ডার পূর্ণ করেছেন। এঁদের কেউ রবি-কাজি, আবার কত বন্দ্যোপাধ্যায়-চট্টোপাধ্যায়। বাস্তবতার নির্যাসে সিক্ত করে তাতে নানান রস-ভাবের মিশ্রণে গ্রীষ্ম হয়ে উঠে ধ্বংসের নয়তো মঙ্গলের প্রতীক।

প্রকৃতিপ্রেমি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গান কবিতায় অতীতের সকল গ্লানি আর অশুভর মুক্তি চেয়ে বৈশাখের কামনা করেন। অন্যদিকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম গ্রীষ্মের কালরূপ বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব-কীর্তি তাঁর ফাটা বাঁশের বাঁশির সুরে ফুটিয়ে তোলেন। শুধু কি তাই!
গ্রামবাংলার স্বর্গনীড় খড়-পাতা আর শনের ছাউনি জ্যৈষ্ঠের খররৌদ্রে দগ্ধ-তুল্য হয়ে উঠে। কখনোবা ঘূর্ণিঝড়ে ঘর গুলো উড়িয়ে নিয়ে দূর-প্রান্তরে খেলা করে, শিলাবৃষ্টিতে ফুটো করে দেয় মাঠে বেঁধে রাখা শালদুধওয়ালা গাভীর উদর; ঝাঁঝরা হয়ে যায় বাঙ্গি, খিরা আর তরমুজের খেত। মাঝেমধ্যে হাটে-ঘাটে,পথে-প্রান্তরে মানুষকেও হতে হয় এই নিষ্ঠুরতার শিকার। এসময় অনাবৃষ্টিতে পুকুর’ খাল-বিল, নদী-নালার পানি শুকিয়ে যায়, নলকূপ আর কুয়ার জলের স্তর নিচে নেমে গিয়ে দেখা দেয় সুপেয় পানির অভাব। শহরের মানুষ গুলো হয়তো তার সবটুকু আঁচ পায় না। অসহনীয় গরমকে এরা শীতলি যন্ত্র দিয়ে জয় করে নিলেও গাঁয়ের মানুষকে এখনও সহ্য করতে হয় তপ্তটিনেরসিসা।
এত কিছুর পরও বাঙালিরা নববর্ষের প্রারম্ভে ফোটা আম-জাম, কাঁঠাল-লিচুর মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধ ভুলেনা এবং পান্তা-ইলিশ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি উদযাপন করে পহেলা বৈশাখ। শহর কিংবা গ্রামের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো হালখাতার আয়োজন করে আপ্যায়ন করে নিজ নিজ খরিদ্দার- মক্কেলদের। বাংলার ঘরে ঘরে উৎসবের
মহীরুহ গজে উঠে। আর জ্যৈষ্ঠের সমীরণে পাকা ফলের সুবাস আমাদের নাকে এসে সুড়সুড়ি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে,আত্মীয়ের বাড়িতে (আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ ) মৌসুমি ফলের বেহার দিতে হবে। দুধের মাছিরাও এসময়ে ফলরাজ্যের বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় একান্তই অতিথি পরায়নতার গুনে। যা আমাদের করেছে প্রকৃতির অকৃতদার আত্মীয়। ঋতু বৈচিত্র্যের গুণে বাঙালির চরিত্রে যেমন রয়েছে রুক্ষতার-কোমলতার ছাপ, তেমনি রয়েছে সংগ্রাম আর বিদ্রোহের ভাব। এসব নিয়ে বাঙালি হয়ে উঠেছে প্রকৃতির সর্বজনীন অধিবাসী।