আমাদের পরবর্তী সংখ্যায় লেখা পাঠাতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ এ ইনবক্স করুন অথবা ইমেইল করুন Ghuri2014@hotmail.com এই ঠিকানায়।

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

ভাষার জন্য ভালবাসা - ২ --- মোঃ রাসেল আপন (২য় সংখ্যা)



আজ স্কুলটা তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলযাক, অবশ্য একটা দিক থেকে ভালই হলবাসায় গতকাল একটা নতুন বই এনেছিলাম, ওটা পড়ার সময় পাওয়া যাবেঅবশেষে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে বইটা হাতে নিলামকালো মলাটের উপর বড় বড় অক্ষরে লেখা "মুক্তিযুদ্ধের ইতিকথা"এরপর যা করার তাই করা শুরু করলাম মানে বইটা পড়া শুরু করলামকারণ বই পড়ার যে ভুতটা আমার মাথায় একবার চাপে বইটা না পড়া পর্যন্ত আর ভুতটা ঘাড় থেকে নামে নাকিন্তু বেশীক্ষণ আর পড়তে পারলাম নাপড়তে পড়তে চলে গেলাম অতীতের পাতায় ____

দিনটা ছিল রবিবার
মিলির সাথে ঐ দিনই শেষ কথা হলমিলি তার মনের কথা গুলো আমাকে খুলে বললতারপরই ফোনের কনভারসেশনটা রেখে দিলআমাকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিল নাতারপর অনেক ফোন দিয়েছি কিন্তু কোন জবাব বা প্রতিউত্তর পাইনি আমিও এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করিকিন্তু, নাহ! পারলাম নামিলির প্রচন্ড ভালবাসা আমাকে ছাড়ল নাআমি চিন্তা করতে লাগলাম, কেন? মিলি বা তার বাবা আমাদের দেশকে, ভাষাকে এত অশ্রদ্ধা করে, অসম্মান করেধীরে ধীরে এই কথা জানার আগ্রহটা এক পর্যায়ে আমাকে বিষিয়ে তোলেআমি আমার দেশের অনেকের কাছে মিলির দেশ সম্পর্কে জানতে চাই? কিন্তু, কেউই আমাকে আমার সঠিক উত্তরটা দিতে পারে নামনে হচ্ছে সবাই আমার কাছে কী যেন লুকাচ্ছেঅবশেষে শরনাপন্ন হলাম বইয়ের উপরঅনেক কষ্টে দুটি বই জোগাড় করলামএকটি হল "সুফিয়া কামালের লেখা একাত্তরের ডায়েরী " এবং আরেকটি হল "এ.আর. মল্লিকের লেখা বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম"নতুন উদ্যম নিয়ে পূনরায় শুরু করলামপড়লাম! খুব ভাল করেই পড়লামএকবার নয়, কয়েকবারঅবশেষে, চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম নানিজের অজান্তে চোখের কোনা বেয়ে রুপালী অশ্রু গড়িয়ে পড়লোআর কিছু না হোক এটুকু বুঝলাম যে, নিজের দেশকে কতটুকু ভালবাসলে নিজেকে, সন্তানকে, পরিবারকে তুচ্ছ করা যায়নিজের বুকের রক্ত ঢেলে সাদা মাটিকে লালে পরিনিত করা যায়আরও বুঝলাম আমাদের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতাক্ষমতা যে মানুষকে তার মনুষ্যত্ত্ব হারিয়ে ফেলতে সাহায্য করে তাও বুঝলাম

অবশেষে চলে এলাম বাংলার মাটিতে
সবুজ ঘাসের মাটিতে পা রাখতেই মনটা প্রফুল্লে ভরে উঠলএসে অবশ্য বসে থাকেনিমিলি ও তার পরিবারকে অনেক খুঁজেছি

আজ পাঁচটা বছর হয়ে গেল
আজ ও মিলিকে খুঁজে পেলাম নাওরা কোথায় আছে, কেমন আছে তা ও জানিনাতবু ও ওদেরকে আমি পাগলের মত খুঁজে বেড়াইআর এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়ি

আজ স্কুলে তাড়াতাড়ি যেতে হবে
আগামী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটা মিটিং আছেরিক্সায় করে স্কুলের উদ্দেশ্য যাত্রা করিস্কুলে পৌছে রিক্সাওয়ালাকে তার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে সোজা চলে গেলাম মিটিং রুমেমিটিং শেষ হতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেলমিটিংয়ে এক একজন শিক্ষকের উপর এক একটি দায়িত্ব পড়লআর আমি যেহেতু, বাংলা বিভাগের শিক্ষক সেহেতু, আমার উপর দায়িত্ব পড়ল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে অবহিত করাদায়িত্বটা পেয়ে আমিও অনেক খুশি হলামকারণ আমিও মনে মনে চেয়েছিলাম এরকম কিছু

সারা স্কুলে সাজ সাজ রব পড়ে গেল
যে যার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে লাগলস্কুল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে শুরু করে সাজানো সহ সকল কাজই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ হতে লাগল

আজ বাসায় এসে হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল
নতুন একটা ছাত্রীর সাথে পরিচয় হলওকে দেখেই হঠাৎ মিলির কথা মনে পড়লমেয়েটা পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতেনতুন ভর্তি হয়েছেআর আশ্চার্যের বিষয়টি হল ঐ মেয়েটির নাম ও মিলিওর গড়নটা ও অবয়ব মিলির মত

যাহোক, এসে গেল সেই বহুপ্রতীক্ষিত দিনটি ১৬ই ডিসেম্বর
স্কুলে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠানপাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে কবিতা আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গান, রচনা, ছড়া ইত্যাদি প্রতিযোগিতারআজ সবাই খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে আসলযথাসময়ে, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হলপ্রতিযোগীরা সবাই প্রস্তুতএকে একে প্রত্যেকে এসে প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করলমিলি নামের ঐ মেয়েটিও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করলও অংশগ্রহণ করলো কবিতা আবৃত্তিতেওর কবিতাটির কয়েকটি লাইন হল______________________

সুন্দর এই বাংলাদেশে, সুন্দর এই ধরায়,
ধ্বংস হল বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদারের বুটের পারায়

তবু বাংলার দামাল ছেলেরা থেমে থাকেনি,
আজ হল ১৬ই ডিসেম্বর মোরা দেশ স্বাধীন করেছি


অদ্ভুত লাগল কবিতাটিযাহোক, পুরস্কার বিতরণী শুরু হয়ে গেল একে একে সবাই এসে পুরস্কার নিয়ে যাচ্ছেমিলি ও পুরস্কার নিতে এসেছেহঠাৎ করেই অজানা আনন্দে বুকের ভেতরটা উদ্ধেলিত হয়ে উঠলতারপর_________

অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে অনেকক্ষণ আগে
আমি আর মিলি কথা বলছিলামবললাম_____________

বাসায় তোমার আর কে কে আছে মিলি?
আমি আর নানা ভাই
মিলি বলল
তোমার বাবা মা?
বাবা কোথায় জানিনা
বাবার কথা জিজ্ঞসা করলে কেউ কোন উত্তর দেয়নাআর মা! মা আমার জন্মের সময় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে

অদ্ভুত দুনিয়া
এতটুকু মেয়ে কিন্তু, দেখলে মনে হয় না, যে ওর ঐ হাস্যেজ্জ্বল মুখের আড়ালে এত দুঃখ জমে আছেআসলে ব্যাপারটা ভাবাই দুষ্করযাহোক, এবার বাসায় যাওয়ার পালাআমি বললাম যে,
তুমি বাসায় যাবে কীভাবে? তোমার বন্ধুরা তো তোমাকে রেখে চলে গেছে

মিলি বলল একা একা যেতে হবে

আচ্ছা একা একা যাওয়া লাগবে না
চলো আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিই

এরপর স্কুল থেকে বের হয়ে মিলিদের বাসার উদ্দেশ্য, মিলিকে নিয়ে রওনা হই
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিদের বাসার সামনে চলে এলাম

স্যার আসুন আমাদের বাসায় থেকে এক কাপ চা খেয়ে যান


আমি ইতিমধ্যে ঐ মেয়েটির প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিযার কারণে আমিও আর না করতে পারলাম নাআমি ওর সাথে বাসার ভিতরে আসলামআমাকে ড্রয়িং রুমে বসতে বলে ভিতরে চলে গেল

ড্রয়িং রুমের চারপাশটা দেখতে গিয়ে হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে আমার চোখ আটকে গেল
কিছুতেই যেন চোখ দুটি দেয়ালে আটকানো ছবিটার দিক থেকে সরাতে পারছিনাএর মধ্যে মিলির নানা ঘরে ঢুকলেনঅপরিচিত লোক দেখে সাধারণত লোকে যা বলে তিনি ও তার ব্যতিক্রম করলেন নাবললেন ___________
কে আপনি?

ততক্ষণে আমার চোখের কোণায় রুপালী বিন্দু জমা হয়ে গেল
আমি বললাম __________
আমি! আমি আবু জাহিদ


নামটা শোনার সাথে সাথে বিদ্যুৎতের মত চমকে উঠলেন এবার রহমান সাহেব
কালো মোটা ফ্রেমের চশমাটা হাতে নিয়ে বললেন __________
তুমি কি সেই আবু জাহিদ?

হ্যাঁ! আমি সেই আবু জাহিদ যে, আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম


আর আত্মসম্বরণ করতে পারলেন না রহমান সাহেব
দুহাতে আমাকে জাপটে ধরে কেঁদে ফেললেন

আমাদের দুজনের মঞ্চ নাটকের এতক্ষণ মিলি দেখছিল
তার বুঝতে মনে হয় বেশ বেগ পেতে হয়েছে কিছুক্ষণ পর তার মুখ থেকে শুধু এতটুকুই উচ্চারণ হল________________ বাবা!