রাফা
এইমাত্র মাথায় একটা ঠুয়া খেয়ে মিনমিন করে পড়তে শুরু করল । তার সবকিছু সহ্য হলেও মায়ের হাতের এই ঠুয়াটাই অসহ্য । এক বিশ্রী গন্ধের জন্য সে ঠুয়াটা খেয়েছে । কয়েকদিন থেকেই সে এই গন্ধটা পাচ্ছে । কিন্তু গন্ধটা কোথায় থেকে আসছে,
সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না । আজ
বিকেলে পাশের পাড়ার সাথে ক্রিকেট খেলতে গিয়েও এই গন্ধ পেয়েছিল । নন-স্ট্রাইক এন্ডে ছিল রাফা । হঠাতই গন্ধটা নাকে লাগায় আশেপাশে গন্ধের উতসটা
খুঁজতে লাগল । ইতোমধ্যে একটা
ডেলিভারী হয়ে যায় এবং স্ট্রাইক এন্ড থেকে সাজিদ রানের জন্য "ইয়েস,
ইয়েস" বললেও গন্ধের উতস খুঁজতে থাকায় রাফা তা শুনতে দেরি করে
ফেলে । ফলাফল রাফা রান আউট
এবং দল পরাজিত । সাজিদ তাদের দলের
ক্যাপ্টেন এবং সবার চেয়ে বড় । ক্লাশ
এইটে পড়ে । তার সিদ্ধান্ত দলের
সবাই মেনে নেয় । আর নিজেকে সে সবসময়
কঠোর হিসেবেই তুলে ধরে । সাজিদ
রাফাকে আগামী চার ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করেছে । সন্ধ্যায়
পড়তে বসেও সেই একই গন্ধ পায় রাফা । সে
জানে না এই গন্ধটা কিসের । আশেপাশে
কিছু খুঁজেও পায় না । তখন
বিকেলের ম্যাচটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাফার । ভাবতে
ভাবতে সে আনমনে পড়তে থাকে, "দেয়ার ইজ সিক্স সিজন ইন বাংলাদেশ । সামার,
রেইনি সিজন......" সে শুধু এই দুটি লাইনই বিড়বিড় করে বলছে । কখন যে তার মা পিছনে এসে দাড়িয়েছে,
সে বলতেই পারে না । তার
মা এসে দেখে রাফা সামনে বাংলা বই খুলে রেখে পড়ছে,
"দেয়ার ইজ সিক্স সিজন....." অবশেষে মাথায় ঠুস করে একটা
ঠুয়া খেল রাফা । নাহ!
এই গন্ধের কথা ভাবতে গিয়ে বারবার সমস্যায় পরতে হচ্ছে ।
রাফা নতুন জুতাগুলো আবারও দেখল । আজই তার বাবা কিনে এনেছে । লাল ও কালো রঙের অদ্ভুত রকম সুন্দর ডিজাইনের জুতা । পরশু ঈদ । কাল তারা গ্রামের বাড়িতে যাবে । ঈদের দিন তার চাচাতো ভাই সিয়ামের সামনে ভালই ভাব নিতে পারবে ভেবে রাফা খুশিই হলো । নতুন জুতার গন্ধটা বেশ লাগে রাফার । রাফা ভাবছে- নতুন জুতার গন্ধের সাথে তো ওই গন্ধের কোন মিলই নেই । তাহলে ওই গন্ধটা কিসের! রাফা প্রায়ই বিভিন্ন রকম গন্ধ পায় এবং গন্ধগুলো সবসময়ই কোন ঘটনার সাথে মিলে যায় । কিন্তু ঘটনাগুলো কখনই সুখকর হয় না । আচ্ছা! সে কখনো ভাল কিছুর গন্ধ পায় না কেন? এই যে তার বাবা তার জন্য নতুন জুতা কিনে আনলো, সে কেন এই গন্ধটা পেল না?
বিছানায় শুয়ে আছে রাফা । আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পরতে হলো । কাল সকালেই তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে । এজন্যই এত তাড়াতাড়ি ঘুমানো । হঠাতই সেই গন্ধটা পেল রাফা! উফ! বিরক্তিকর! এই গন্ধটা কিসের! এর আগেও সে বিভিন্ন রকম গন্ধ পেত । দুই-তিন মাস আগে সে প্রায়ই প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ পেত । কিন্তু আশেপাশে কিছুই পুড়তো না । তার কয়েকদিন পরই তাদের রান্নাঘরে শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন লাগে । অবশ্য তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই । এর কয়েকদিন পর প্রায়ই সে ঔষুধের গন্ধ পেত । তার কয়েকদিন পরই তার বড় বোন রুপা যে রিকশায় করে আসছিল, একটা ট্রাক সেটাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় । রুপা প্রায় সাতদিন হাসপাতালে ছিল । আচ্ছা, এই গন্ধটাও কি কোন বিপদের আভাস দিচ্ছে? কিন্তু কি বিপদ? আর গন্ধটাই বা কিসের? গন্ধটা অবশ্য ভালই লাগে । এসব ভাবতে ভাবতেই রাফা ঘুমিয়ে গেল ।
বাসার সবাই গোছাতে ব্যস্ত । গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সকালটায় রাফার মনে এক ধরনের ফুর্তি কাজ করে । কিন্তু আজ সে মনমরা হয়ে বসে আছে । কারন, রাতের দেখা উদ্ভট স্বপ্নগুলো । কাল সারা রাতই সে অনেকগুলো উদ্ভট স্বপ্ন দেখে । শুধু একটাই মনে আছে । রাফা, রুপা আর তাদের বাবা-মা দৌড়াচ্ছে । পিছনে এক ধরনের গন্ধ ধোঁয়য়ার মত তাদেরকে ধাওয়া করছে । এক সময় তারা হোঁচচট খেয়ে পরে যায় । চারদিক থেকে ধোঁয়য়া তাদেরকে ঘিরে ধরে । সে অবশ্য স্বপ্নটা ভুলেই গিয়েছিল । কিন্তু সকাল থেকেই সে অনবরত সেই গন্ধটা পাচ্ছে । আর তখনই স্বপ্নটা মনে পরে যায় । তার মাথার মধ্যে স্বপ্নের দৃশ্যগুলো ঘুরছে । হঠাত রুপা তার পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলল, "কিরে বান্দর, মুখ লটকায় বসে আছিস কেন! যা রেডি হ" । সে উঠে রেডি হতে চলে গেল ।
রাফা বাসে বসে আছে । তার পাশে তার বোন বসে আছে । তাদের পিছনের সিটে তাদের বাবা-মা । রাফা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে । তার মাথায় স্বপ্নের দৃশ্যগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে । গ্রামের বাসায় যাওয়ার সময়গুলোতে সে কখনও স্থির থাকে না । কিন্তু এবার সে ঝিম লেগে বসে আছে । রুপা পাশ থেকে বলল, "কি হয়েছে রে তোর? এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?"
-আপু, তুমি কোন গন্ধ পাচ্ছো? অনেকটা ওষুধের মত । তবে তার চেয়ে হালকা ও মিষ্টি ।
রাফা নতুন জুতাগুলো আবারও দেখল । আজই তার বাবা কিনে এনেছে । লাল ও কালো রঙের অদ্ভুত রকম সুন্দর ডিজাইনের জুতা । পরশু ঈদ । কাল তারা গ্রামের বাড়িতে যাবে । ঈদের দিন তার চাচাতো ভাই সিয়ামের সামনে ভালই ভাব নিতে পারবে ভেবে রাফা খুশিই হলো । নতুন জুতার গন্ধটা বেশ লাগে রাফার । রাফা ভাবছে- নতুন জুতার গন্ধের সাথে তো ওই গন্ধের কোন মিলই নেই । তাহলে ওই গন্ধটা কিসের! রাফা প্রায়ই বিভিন্ন রকম গন্ধ পায় এবং গন্ধগুলো সবসময়ই কোন ঘটনার সাথে মিলে যায় । কিন্তু ঘটনাগুলো কখনই সুখকর হয় না । আচ্ছা! সে কখনো ভাল কিছুর গন্ধ পায় না কেন? এই যে তার বাবা তার জন্য নতুন জুতা কিনে আনলো, সে কেন এই গন্ধটা পেল না?
বিছানায় শুয়ে আছে রাফা । আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পরতে হলো । কাল সকালেই তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে । এজন্যই এত তাড়াতাড়ি ঘুমানো । হঠাতই সেই গন্ধটা পেল রাফা! উফ! বিরক্তিকর! এই গন্ধটা কিসের! এর আগেও সে বিভিন্ন রকম গন্ধ পেত । দুই-তিন মাস আগে সে প্রায়ই প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ পেত । কিন্তু আশেপাশে কিছুই পুড়তো না । তার কয়েকদিন পরই তাদের রান্নাঘরে শর্ট-সার্কিট থেকে আগুন লাগে । অবশ্য তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই । এর কয়েকদিন পর প্রায়ই সে ঔষুধের গন্ধ পেত । তার কয়েকদিন পরই তার বড় বোন রুপা যে রিকশায় করে আসছিল, একটা ট্রাক সেটাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় । রুপা প্রায় সাতদিন হাসপাতালে ছিল । আচ্ছা, এই গন্ধটাও কি কোন বিপদের আভাস দিচ্ছে? কিন্তু কি বিপদ? আর গন্ধটাই বা কিসের? গন্ধটা অবশ্য ভালই লাগে । এসব ভাবতে ভাবতেই রাফা ঘুমিয়ে গেল ।
বাসার সবাই গোছাতে ব্যস্ত । গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সকালটায় রাফার মনে এক ধরনের ফুর্তি কাজ করে । কিন্তু আজ সে মনমরা হয়ে বসে আছে । কারন, রাতের দেখা উদ্ভট স্বপ্নগুলো । কাল সারা রাতই সে অনেকগুলো উদ্ভট স্বপ্ন দেখে । শুধু একটাই মনে আছে । রাফা, রুপা আর তাদের বাবা-মা দৌড়াচ্ছে । পিছনে এক ধরনের গন্ধ ধোঁয়য়ার মত তাদেরকে ধাওয়া করছে । এক সময় তারা হোঁচচট খেয়ে পরে যায় । চারদিক থেকে ধোঁয়য়া তাদেরকে ঘিরে ধরে । সে অবশ্য স্বপ্নটা ভুলেই গিয়েছিল । কিন্তু সকাল থেকেই সে অনবরত সেই গন্ধটা পাচ্ছে । আর তখনই স্বপ্নটা মনে পরে যায় । তার মাথার মধ্যে স্বপ্নের দৃশ্যগুলো ঘুরছে । হঠাত রুপা তার পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলল, "কিরে বান্দর, মুখ লটকায় বসে আছিস কেন! যা রেডি হ" । সে উঠে রেডি হতে চলে গেল ।
রাফা বাসে বসে আছে । তার পাশে তার বোন বসে আছে । তাদের পিছনের সিটে তাদের বাবা-মা । রাফা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে । তার মাথায় স্বপ্নের দৃশ্যগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে । গ্রামের বাসায় যাওয়ার সময়গুলোতে সে কখনও স্থির থাকে না । কিন্তু এবার সে ঝিম লেগে বসে আছে । রুপা পাশ থেকে বলল, "কি হয়েছে রে তোর? এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?"
-আপু, তুমি কোন গন্ধ পাচ্ছো? অনেকটা ওষুধের মত । তবে তার চেয়ে হালকা ও মিষ্টি ।
-হ্যা । পাচ্ছি । কর্পূরের গন্ধ । বাসে কার কাছে যেন আছে ।
-আচ্ছা আপু, এইটা কি কাজে লাগে?
-কি জানি । তবে মৃত মানুষের শরীরে দেয় ।
-আপু, আমার না ভয় লাগছে!
-কেন?
-বাসায় আগুন লাগার আগে আমি প্লাস্টিক পোড়ার গন্ধ পেতাম । তোমার এ্যাক্সিডেন্টের আগে ওষুধের গন্ধ পেতাম । কয়েকদিন ধরেই আমি কর্পূরের গন্ধ পাচ্ছি । আজ কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না তো? আমি কাল সারারাত উল্টা-পাল্টা স্বপ্নও দেখেছি!
-(কয়েক মুহুর্ত চুপ থেকে) আরে পাগল, স্বপ্ন তো স্বপ্নই । তুই এগুলা নিয়ে ভাবিস না ।
-কিন্তু গন্ধটা!
-কিসের গন্ধ! এগুলা তোর ভুল ধারনা । বাস ছেড়ে দিয়েছে । তুই এখন ঘুমা । নাহলে আবার বমি করবি! রুপা রাফার মাথাটাকে নিজের কাঁধে রেখে হাত বুলাচ্ছে । ধীরে ধীরে রাফা ঘুমিয়ে পরলো ।
রাফা দৌড়াচ্ছে । প্রাণ-পণে দৌড়াচ্ছে । তার পিছনে ধোঁয়য়া । আর একটু হলেই ধোঁয়য়া তাকে ঘিরে ফেলবে । সে হোঁচচট খেয়ে পরে গেল । তার মাথার উপরে ধোঁয়য়া । সে তার অবচেতন মনেই বুঝতে পারছে যে এটা স্বপ্ন । সে স্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে চাচ্ছে ।
রুপা দেখছে রাফা ঘুমের ঘোরে কাঁপছে । কেমন যেন অস্ফুট শব্দ করছে । মনে হয় স্বপ্ন দেখছে । রুপা রাফার শরীরে হালকা ধাক্কা দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করছে । ধোঁয়য়া রাফাকে ঢেকে ফেলছে, এমন সময় রুপার ধাক্কায় রাফার ঘুম ভেঙে গেল । ঠিক সেই মুহুর্তেই বাসটা কোন কিছুর সাথে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা খেল! সাথে সাথে বাসটা কাত হয়ে রাস্তার পাশে খাদে পরে যাচ্ছে । বাসের মধ্যে সবাই আতংকে চিতকার করছে । প্রচন্ড ধাক্কায় একেকজন ছিটকে পরছে । বাসটা কাত হয়ে উল্টে যাওয়ায় রাফার মাথা বাসের সাথে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা লাগল । সে যেন কয়েক মিনিটের জন্য জ্ঞানশূন্য হয়ে গেল ।
আশেপাশে অনেক মানুষের চিতকার শুনছে রাফা । রক্ত দিয়ে চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে । অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখল, রুপার সারা শরীর ছিন্ন-ভিন্ন । মায়ের মাথার খুলির একাংশ ফেটে রক্ত পরছে । বাবাকে দেখছে না । রাফার নাকে আগরবাতির গন্ধ লাগছে । তাহলে কি তার মৃত্যুই হবে! মাথার ভিতরে একটা চিনচিনে ব্যাথা । চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে রাফার । গন্ধটা আরো তীব্র হচ্ছে....