‘নয়ন ভরা জল’ সিনেমাটি দেখেছেন? এটি হিন্দি মুভি ‘হামারা দিল আপকি পাস হায়’ এর নকল । দুইটি ছবিই আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে । হিন্দি ছবিটিতে নায়িকা ধর্ষিত হলেও বাংলা ছবিটিতে নায়িকা ধর্ষিত হয় না । কিন্তু কেন? তার আগে আরো কিছু ব্যাপার দেখা যাক । বাংলা কোন ছবিতেই কোন মেয়ে ধর্ষিত হয় না । এমনকি পার্শ্বচরিত্রের কেউ সাধারণত ধর্ষিত হয় না । তারা জান দিবে তবু ইজ্জত নষ্ট হতে দিবে না, এই টাইপের ভাষন দিয়ে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে মারা যায় বা ছাঁদ থেকে লাফ দেয় । আবার যদি কোন পার্শ্বচরিত্রের মেয়ে ধর্ষিত হয়, সে আত্মহত্যা করে এবং এই ধরণের একটা মেসেজ লিখে দিয়ে যায় যে, তার ইজ্জত নষ্ট হয়ে গেছে, কাউকে সে আর এ মুখ দেখাতে পারবে না, তার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই ।
আমরা জানি বাংলা সিনেমার নায়ক কখনো খারাপ হয় না । সে যদি ডাকাতি করে তবে সে সেই লুন্ঠিত সম্পদ গরীবের মাঝে বিলিয়ে দেয় তাই সে হিরো । সে গুন্ডাদের খুন করে তাই সে অপরাধী না । সে কোন মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টি দেয় না, নায়িকার সাথে যা করে তা আসলে খারাপ কিছু না(পরিচালকদের মতে) । তার মানে নায়ক কখনো অন্যায় কিছু করতে পারে না । সেই একি থিওরি অনুযায়ী নায়িকাও কখনো খারাপ কিছু করতে পারে না । তাই সে ধর্ষিত হয় না । তার মানে এইসব সিনেমা থেকে এমন একটা মেসেজ পাওয়া যায় যে, যে মেয়েটা ধর্ষিত হল সে অপরাধ করল, সে অপরাধী, সে কলঙ্কিনী, চরিত্রহীনা । তার মান-সম্মান, ইজ্জত নষ্ট হয়ে গেছে । তাই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার তার নেই, তাকে আত্মাহুতি দিতে হবে । কি মজার কথা, যে কুকর্ম করল তার চরিত্র নষ্ট হয় না, চরিত্র নষ্ট হয় নিরপরাধ মেয়ের ।
এবার মূল কথায় আসি । ধর্ষণ একটা অপরাধ, যে ধর্ষক সে অপরাধী কিন্তু ধর্ষিতা অপরাধী নয় । ধর্ষণের ফলে একটি মেয়ে কখনোই চরিত্রহীন, কলঙ্কিনী কিংবা নষ্ট হতে পারে না । ধর্ষণকে দেখতে হবে আর সব অপরাধের মত । খুনী অপরাধী কিন্তু যে খুন হয়েছে সে নয়, যে হামলা করে সে অপরাধী কিন্তু যে হামলার শিকার সে অপরাধী নয় । ঠিক তেমনি ধর্ষক অপরাধী, ধর্ষিতা নয় । আমরা যে খুন হয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানাই, হামলার শিকার ব্যক্তির পাশে দাঁড়াই, তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই । তেমনি হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ধর্ষিতার সাহায্যের জন্যে, তার পাশে দাঁড়াতে হবে ধর্ষকের শাস্তির জন্য । আমাদের অনুধাবন করতে হবে মেয়েটি শারীরিক এবং মানসিক হামলার শিকার হয়েছে, তার সাহায্য প্রয়োজন । তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন যাতে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে । সে পচে যায় নি, তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় না । তবে কেন আমরা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব? কেন তার দিকে নাক কুচকে তাকাব? ছেলেরা কেন তার দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকাবে, সে কি পতিতার মত সস্তা হয়ে গেছে? আমাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে ।
মেয়ে তোমাকে বলছি, শোন । তুমি আগে যেমন ছিলে এখনো তেমনি আছো । ধর্ষণের ফলে তোমার চরিত্রে বিন্দুমাত্র দাগ লাগতে পারে না । স্বর্ণ ড্রেণে পড়ে গেলেও তার দাম কমে না আর তুমি তো স্বর্ণ-হীরার চেয়েও মূল্যবান । তুমি আগে যেমন পবিত্র ছিলে ঠিক তেমনি পবিত্র আছ এখনো । জানি এটা তোমার জন্য ভীষণ অপমানজনক । কিন্তু তুমি কেন অন্যের অপরাধের জন্য তোমার সুন্দর জীবন বিসর্জন দিবে? তুমি জীবন দিলে কি সেই ধর্ষকের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে? না । সে আরেকটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে । তাই এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর ।
পরিশেষে, সময় এসেছে, আমাদের সিনেমার মেসেজ বদলে ফেলার, আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলার, আমাদের মেয়েদের মনোভাব বদলে ফেলার । সময় এসেছে ছেলেদের মানুষ হয়ে উঠার ।