এখন আর কোন পড়াশুনা করতে হয় না। তবু ভাল লাগেনা তার। সারাদিন বসে বসে রেডিও শোনে সে। রেডিওতে যুদ্ধের আহ্বান শুনতে পায়। রক্তেঝর ওঠে যখন সে যুদ্ধের গান শুনে। এক সময় সে বুঝতে পারে এই দেশপাকিস্তানীরা দখল করতে যাচ্ছে। শত্রুদের শায়েস্তা করতে হবে।
একদিন একবন্ধু বলল পোড়াবাড়ীটাতে নাকি মুক্তিযোদ্ধারা থাকে। ছোটনকে আর পায় কে,সোজাওদের কাছে গিয়ে হাজির। গিয়ে বলল "আমি যুদ্ধে যেতে চাই"। কমান্ডার সাহেববললেন "এতটুকুন বাচ্চা তুমি,আরো বড় হও,তারপর আইসো"। কিন্তু ছোটনতো নাছোরবান্দা। তাই তাকে কমান্ডার একটা কাজ দিলেন। একটা জায়গা থেকে মাঝে মাঝেভাতের বাটিতে করে হাতবোমা আনতে হবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে যে মাঠে ভাতনিয়ে যাচ্ছে সে বাবার জন্য। ছোট মানুষ। কেউ সন্দেহ করবেনা। মহানন্দে সেকাজটা করে যাচ্ছিল। আর যোদ্ধাদের ট্রেনিং দেখেই সময় পার করছিল।
একদিন শুনলো যে ওদের গ্রামের স্কুলে নাকি পাক আর্মিরা ক্যাম্প করেছে। ছুটেগিয়ে কমান্ডারকে জানালো সে। কমান্ডার তাকে বললেন,"ছোটন,আইজক্যার খ্যাপটারপর আর বোমা আনতে যাইস না। রিস্ক আছে"।
শেষবারের মত বোমা নিয়েফিরছে সে। রাস্তায় একজনের কাছ থেকে জানলো ওদের বাড়ীতে নাকি মিলিটারি গেছে। এক দৌড়ে বাড়ীতে গেল ছোটন। গিয়ে দেখে বাবা-মা আর নেই। মিলিটারিরা ওদের গুলিকরে মেরে ফেলেছে। প্রতিবেশিরাও পালিয়েছে। কবর দেয়ারও কেউ নেই।
ছোট্ট ছোটন কাঁদলো সন্ধ্যা অবধি। তারপর যখন অন্ধকার ঘনাল। বোমাগুলো বের করল। সে জানে কিভাবে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। সারাগায়ে পাতিলের কালি মেখে বাড়ীথেকে বের হল। মিলিটারি ক্যাম্পের পাশে ঝোপের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াল। ওইতো দেখাযাচ্ছে ওদের অফিসারকে। বারান্দায় টেবিলের পেছনে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর কিসব বলছে। সামনে বাকিরা দারিয়ে ওর নির্দেশ শুনছে। ওরাইতো বাবা-মা কে মেরেছে। সবাইকে মেরে দেবে ওরা। দেশটা কেরে নেবে। না। তা হবেনা। আজ ওদের শেষ করেদেব। এসব ভাবতে ভাবতে ওদের লক্ষ করে একে একে বোমা ছুড়তে শুরু করল ছোটন। বোমার আঘাতে ছোট আর্মি ক্যাম্পটা নরকে পরিণত হল। দিশেহারা হয়ে পরলো পাকসেনারা। দ্রিম দ্রিম আকাশ বাতাস কাঁপানো শব্দের আড়ালে ঢাকা পরলো ওদেরআর্তনাদ। একের পর এক দ্রুত সবগুলো বোমা ছুরেই প্রাণপণ দৌড় দিল সে। এ দৌড়শুধু এক ছোটনের দৌড় নয়। এক ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধার দৌড়। বিজয়ের দৌড়। যে দৌড়েরলক্ষ্য- প্রিয় স্বাধীনতা।