ইউ.এফ.ও শব্দটা আজকাল আমাদের কাছে আর অপরিচিত না। একবিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে
ছেলেবুড়ো প্রায় সবাই ই টেলিভিশনের পর্দায় বহুবার দেখেছে এই আজব বস্তুটিকে। ভিনগ্রহ-বাসীরা এই ইউ.এফ.ও চড়ে আসে আমাদের পৃথিবীতে। নানা রকম অদ্ভুতুড়ে কান্ড ঘটায়। সিনেমার কাহিনী এগিয়ে চলে। বিভিন্ন ট্র্যাজিডি ঘটিয়ে সিনেমা
শেষ হলেও ইউ.এফ.ও নিয়ে আলোচনার শেষ হয়না। যাইহোক আসুন আমরা ইউ.এফ.ও সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে নিই।
ইউ.এফ.ও (U.f.o) হল -Unidentified
Flying Object এর সংক্ষেপিত রূপ। অনেকে অবশ্য ফ্লাইং সসার ও বলে থাকেন কারণ এর আকৃতি অনেকটা উলটানো
পিরিচের মত। তবে ইউ.এফ.ও যে শুধুই সসার আকৃতির, তা কিন্তু নয়। অনেকেই সিগার
আকৃতির ইউ.এফ.ও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। কেউ কেউ আবার গাছের গুড়ির আকৃতির ও গোলাকৃতির ইউ.এফ.ও ও নাকি দেখেছেন। পিরামিড আকৃতির
ইউ.এফ.ও দর্শনকারীর সংখ্যাও নিতান্ত কম না।
প্রাচীন মিশরের অনেক লিপিতেই এই উড়ন্ত চাকতির উল্লেখ আছে। তাদের মধ্যে একটি বেশ উল্লেখযোগ্য ,
সেটি হচ্ছে মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের তৃতীয় ফারাও টুথমোজ এর একটি লিপি। ফারাও শীতের
তৃতীয় মাস,
এবং দিবসের ষষ্ঠ ঘণ্টায় আকাশে কিছু অদ্ভুত দর্শনের উড়ন্ত অগ্নি গোলক দেখতে পান বলে
তা লিপিবদ্ধ
করে রাখার নির্দেশ দেন। এটি খ্রিস্টের জন্মের ও প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বের ইতিহাস। এর পরেও বহুবার ইউ.এফ.ও এর দর্শনের কথা শোনা যায়। তবে বর্তমান পৃথিবীর ইতিহাস অনুসারে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইউ.এফ.ও দর্শন এর তারিখ ১৫৬১ সালের ১৪ ই এপ্রিল। যা দেখা যায় জার্মানির নোরেমবার্গ এ।
সুপ্রাচীন অতীত ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে আমরা গেল ৩০-৪০ বছরের ইতিহাসের দিকে একটু চোখ বুলাই চলুন।
হোয়াইটভিল, ভার্জিনিয়া এর ঘটনা:
১৯৮৭ সাল। হোয়াইটভিল, ভার্জিনিয়া এর একটি ছোট ,শান্ত , ছিমছাম শহর। WYVE নামের
একটি রেডিও স্টেশনে কাজ করেন ড্যানি গরডন নামের এক যুবক। প্রতি
রাতের মতো রেডিও বার্তা চেক করতে যেয়ে তিনি বেশ কিছু
অস্বাভাবিক রিপোর্ট পান। এই রিপোর্ট কারীদের মধ্যে তিন জন ছিলেন আবার শেরিফ। তারা সবাই হোয়াইটভিল এর আকাশে একগুচ্ছ অদ্ভুত আলো দেখতে পান বলে দাবী করেন। ড্যানি প্রথমে এটি হেসে উড়িয়ে দিলেও মুহূর্তের মধ্যেই হোয়াইটভিল থেকে আরও অনেক তাদের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন যে এটি তাদের
চোখে পড়েছে।
ড্যানি এটিকে ভার্জিনিয়া এয়ার বেস এর কোন এক্সপেরিমেন্ট
ভাবলেও তাদের
সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়ে দেন , সে রাতে এমন কিছু পরীক্ষা করা হয়নি।
ব্যাপারটা ধীরে ধীরে সবার মনেই একটা খটকা তৈরি করে। এর প্রায় দু সপ্তাহ পর,
ড্যানি এবং তার বন্ধু রজার হল দুজনেই খুব কাছে থেকে ইউ.এফ.ও দেখতে পান বলে জানান।
“আমরা তখন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ করেই গাড়ির বা দিকে আমার চোখ গেলো এবং আমি ভূমির সরলরেখা বরাবর একটি খুব ই অস্বাভাবিক বস্তু লক্ষ্য করলাম। সাথে সাথেই
গাড়িটা ডান পাশে রেখে আমরা লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। আমরা দেখতে পাই , যে আকাশযানটি আমাদের দিকে আসছে , সেটি আকৃতিতে বিশাল এবং তার মাথার দিকে একটি ডোম আছে এবং কোন পাখা অনুপস্থিত। আকাশ যানটির ডান দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, সেটি যত দ্রুতই আমাদের দিকে ধাবিত হচ্ছিল,
ঠিক ততো দ্রুতই আমাদের থেকে দূরে চলে গেলো, এবং একটা সময় মিলিয়ে গেলো। ”
এ ঘটনার তিন মাসের মধ্যেই প্রায় শতাধিক লোক ইউ.এফ.ও গুলোকে বার বার দেখতে পান। কয়েকটি ছবি ও তোলা হয় যার মধ্যে এগুলো উল্লেখযোগ্য হোয়াইটভিল এর এই অদ্ভুত ঘটনার কোন ব্যাখ্যাই পায়নি
হোয়াইটভিলবাসী।
ফিনিক্স রহস্যঃ মার্চ ১৩, ১৯৯৭ এর রাত। অ্যারিজোনা এর অধিবাসী Michael Krzyston এর অপটু লেন্স এ ধরা পড়লো “v”
আকৃতির এক অদ্ভুত আলোক গুচ্ছ। শুধু Krzyston
ই নন, অ্যারিজোনার
কমপক্ষে হাজার খানেক মানুষ সে রাতে এক ই আলো দেখেছেন এবং এগুলো যে ইউ.এফ.ও, এ সম্পর্কে তারা প্রায় নিঃসন্দেহ ।
রসওয়েল এর অমীমাংসিত রহস্যঃ এটি ইউ.এফ.ও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত খুব বেশি আলোচিত একটা ঘটনা। ঘটনার সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে একটি বজ্রপাত সহ ঝড়ের মাধ্যমে। ‘ম্যাক’
নামের এক ভদ্রলোক তখন তার ঘরে বসেই ঝড় দেখছিলেন। হঠাৎ তার বাড়ির সংলগ্ন বড় ক্ষেতে তিনি বেশ বড়সড় এবং অস্বাভাবিক এক বজ্রপাতের শব্দ পান। পরেরদিন তিনি যখন তার ছেলেকে নিয়ে তার ক্ষেত এর ক্ষয় ক্ষতি
দেখতে গেলেন
তখন অবাক হয়ে দেখলেন, বজ্রপাতের কোন চিহ্নই নেই। বরং সারা মাঠ
জুড়ে পড়ে
রয়েছে কোন কিছুর ধ্বংসাবশেষ। প্রায় তিন মাইলের ও বেশি লম্বা এবং দুই তিনশত ফুট প্রস্থ জুড়ে ধ্বংসাবশেষ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ম্যাক এর ভাষ্য অনুসারে,
উদ্ধারকৃত টুকরো গুলিকে এককথায় ধাতু বলা যায়না। টুকরোগুলি ছিল বেশ মজবুত,
এবং প্লাস্টিক এর মতো হালকা অথচ প্লাস্টিক নয়। দুই তিন ফুট লম্বা টুকরো গুলিও খবরের কাগজের মতোই হালকা ছিল, বলেন ম্যাক। তবে এই টুকরো গুলোকে তিনি কাটতে পারেননি এবং আগুনেও পোড়াতে পারেন নি বলে জানান তিনি। পরেরদিন রসওয়েল
আর্মি এয়ার বেস এ ঘটনাটি জানানো হয়। সেদিন বিকেলেই
আর্মি
ইন্টেলিজেন্স এর কিছু কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে
আসেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মেজর জেসি মারসেল যার উপরে এই ঘটনাটি তদন্তের মুল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তিনিও টুকরো গুলি
দেখে হতভম্ব হয়ে যান। মৃত্যুর আগ
পর্যন্ত
তিনি বলে গেছেন যে এটি তার জীবনে দেখা সবচেয়ে বেশি
অস্বাভাবিক ঘটনা। তিনিও টুকরো গুলিকে আগুনে পোড়াতে পারেন নি। তিনি দৃঢ় ভাবেই
দাবী করেন,
এটি কোন ভাবেই এয়ার বেলুন,
অথবা পৃথিবীতে তৈরি কোন আকাশ যান এর ধ্বংসাবশেষ নয়। তার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে যে টুকরোটি সেটি একটি ছোট এল বিম এর টুকরো যেটি এর উপরে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন এবং অক্ষর খোদাই করা ছিল। এটা থেকে তার মনে বিশ্বাস আরও প্রবল হয় যে এটি পৃথিবীর বাইরের কোন একটা স্থানে তৈরি কোন আকাশযান। খবরটা নিউজপেপারে চলে আসে মুহূর্তের মাঝেই। ঠিক ওইদিন সক্করো, মেক্সিকো
থেকেও ইউ.এফ.ও দর্শনের কিছু রিপোর্ট পাওয়া যায়। এই ঘটনাগুলি
রসওয়েল এ বেশ
চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। তবে রসওয়েল এয়ার বেস কোন এক অজ্ঞাত কারণে খবরটা ধামাচাপা
দেওয়ার প্রাণপণ
চেষ্টা করে। গ্লেন ডেনিস
নামের ২২ বছরের এক ছেলেও ম্যাক এর মাঠ টি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকেও
মিলিটারি ক্যাম্প এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বলা হয়,
এটি নিয়ে আর কোন রকম উচ্চবাচ্য না করার জন্য। এছাড়া ঠিক ওই সময়ে একজন নার্স দাবী করেন, তাকে এয়ার বেস ক্যাম্প এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনটি বডি অটোপসি করার জন্য। তিনি বলেন, তিনটি প্রাণীর কোনটি ই পৃথিবীর নয় এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। তিনি প্রাণীগুলির বর্ণনা দেন এভাবে-“তারা আমাকে ডেকেছিল partial autopsy এর জন্য। তাদের ওখানে একটা বড় ক্রাশ ব্যাগ ছিল যেটির মধ্যে দোমড়ানো মোচড়ানো খুব ছোট দুটি বডি ছিল যাদের মাথা ছিল দেহের তুলনায় অনেক বড়। তাদের কোন কান ছিল না,
বরং তাদের কানের দুটি ক্যানাল ছিল। তাদের বিবর ছিল
দুটি ,এবং তাতে কোন দাঁত ছিলনা। ”পরবর্তীতে গ্লেন অবশ্য নার্সটিকে অনেক খুঁজতে চেষ্টা করেছিল
,
যদিও তাকে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটি প্রমাণিত হলে এয়ার বেস মিলিটারি তাদের বিবৃতি দান করে
বলেন,
তাদের প্রাপ্ত প্রাণীগুলো আসলে একটি এয়ার বেলুনের ডামি ছিল। যদিও তাতে সন্দেহ দূরীভূত না হয়ে
উল্টো সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
ইউ.এফ.ও যে শুধু পৃথিবীর আকাশে কিংবা মাটিতে দেখা গেছে , তা কিন্তু নয়। বরং পানিতেও ইউ
এফ ও দর্শনের নজির মেলে। বিমিনির উত্তরে
আইজাক লাইট আর
মিয়ামি এর মধ্যখানে গালফ স্ট্রিমের জলের তলায় বার বার দেখা
গেছে সিগার
আকৃতির ইউ.এফ.ও। ডেলমনিকো নামের এক ক্যাপ্টেন পানির নিচে এই সাদাটে ধূসর বস্তুটি দেখতে পান। তার দাবী, এটি কোনভাবে পানিতে আলোড়ন তৈরি না করে চলাফেরা করছিল। পুয়ের্টোরিকো এর
কাছের সাগরেও ইউ.এফ.ও এর দেখা মেলে একবার। মার্কিন নৌবাহিনীর কোন একটা মহড়া চলাকালীন সময়ে তাতে অংশগ্রহণকারী
সকল জাহাজ এবং
সাবমেরিন এই জলের নিচে ইউ.এফ.ও টা দেখতে পান। সাবমেরিন একে ধাওয়া করলেও বস্তুটি নিমিষেই সাতাশ হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত নেমে
ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছিলো। এর গতিও ছিল অস্বাভাবিক এবং আলোড়ন বিহীন।
অবাক হলেও সত্যি ইউ এফ এ পৃথিবীর বিশেষ কিছু অঞ্চলেই বেশি
যাতায়ত করে যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে
ইউএসএ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম। এছাড়া মেক্সিকো,আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা,রাশিয়াপর্তুগাল,নেপাল,চীন, সুইডেন কানাডা,যুক্তরাজ্য এসব
দেশেও নাকি দেখা গেছে ইউ.এফ.ও। বিজ্ঞনীদের
ধারনা এইসব অঞ্চলে এমন কিছু আছে যার টানে বার বার ওইসব স্থানে আগমন ঘটে ইউ.এফ.ও এর।
অনেকে আবার দাবী করছেন ইউ.এফ.ও চড়ে ভিন গ্রহবাসীরা আসে পৃথিবী থেকে পানি,ইউরেনিউম ইত্যাদি নিয়ে যেতে। তবে মানুষ ও যে
নিয়ে যায়নি তা কিন্তু নয়। ইউ.এফ.ও পৃথিবী থেকে বিভিন্ন সময় মানুষকেও ধরে নিয়ে গেছে বলেও
বিজ্ঞানীরা ধারনা করে থাকেন। এ সম্পর্কে
যথেষ্ট প্রমাণ ও আছে তাদের কাছে।
কি হল কোথায়
হারালেন ?
অপেক্ষা করতে থাকেন হয়ত কোন একদিন আপনার সামনেও এসে হাজির হবে ইউএফও। তখন নাহয় সুযোগ বুঝে দেখা
সাক্ষাতটা করে ফেলবেন ভিন গ্রহবাসী এলিয়েনদের সাথে। যদি কোন সুন্দরী এলিয়েনকে মনে ধরে
প্রপোজটাও করে ফেলতে পারেন। বলা তো যায়না যদি তার ও আপনাকে মনে ধরে যায় তখন
?
সুত্রঃ ইন্টারনেট ও উড়ন্ত সসার-রাকিব হাসান।