বরুণ'দা বলেছিল
ঘাবড়াসনে সুকান্ত গতকাল সূর্যটা আসেনি তাতে কি
আগামীকাল ভোরে ঠিক চলে আসবে
তোদের জন্য সূর্যটা আনতেই তো যুদ্ধে যাচ্ছি
মাকে দেখে রাখিস- তুই পাশে থাকলে মা সাহস পাবেন
আমরা সবাই পাশে থাকলে আমাদের বঙ্গমাতা সাহস পাবে
এতো সহজ নাকি রে কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে
আমাদের দেশটাকে ওরা চাঁদ তারার পতাকায় ঢেকে দিবে
ছাড়বার পাত্রটি আমরা নই- ওরা জানেনা রে
আমরা যে বাংলা মায়ের দামাম ছেলে
আমাদের দেশটা অনেক সবুজ- শুধু সূর্যটা একটু দূরে সরে গেছে
দেখিস কাল সূর্যটাকে বাংলার ঘরে নিয়ে আসবো
ভালো থাকিস- মাকে বলিস
তোমার ছেলে স্বাধীনতার সূর্য না এনে ফিরবে না
দাদা, আমার ভয় করে যদি তোর কিছু হয়ে যায়
আরো তো অনেকে আছে, তোর যাওয়ার কি দরকার
আরে পাগল এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো
তোর দাদা ঠিকটি ঘরে ফিরে আসবে, দেখে নিস
বরুণ'দা চলে গেলো, চলে
গেলো আরো বিয়াল্লিশটি বছর
দাদা আমার আজো ঘরে এলোনা- এসেছিল শুধু একটাই খবর
নয় মাস যুদ্ধ করে দাদা দিয়ে গেছে আমাদের টকটকে লাল এক সূর্য
মা বলেন, তোর দাদা কোথায় আছে জানিস- ঐ
সূর্যের বুকে
তোর দাদা প্রতি ভোরে সূর্যের আলো হয়ে ফুটে এই বাংলার বুকে
যতদিন এই পৃথিবীতে সূর্য থাকবে- তোর দাদা বেঁচে থাকবে রে সুকান্ত
দাদা জানিস, মা তবুও প্রতি সন্ধ্যায় প্রদীপ
জ্বেলে
রক্ত জবা গাছের নিচে বসে থাকে
তোর জন্য কুশিকাটায় সোয়েটার বুনে- গত বিয়াল্লিশটি বছর ধরে বুনছে
আমি মায়ের পাশে এসে বসলেই আমায় বলে, দেখি
একটু পিছন ফিরে বসতো
আমার গায়ে সোয়েটারের মাপ নিয়ে বলে
তুই তো তোর দাদার মতোই হয়েছিস, তোর মাপেই তোর
দাদার হয়ে যাবে
মায়ের চোখে অশ্রু গড়ায়- দাদারে আমার বুকটা ফেটে যায়
মাকে বলি, মা চলো ঘরে চলো- ঠান্ডা বাতাস
ছেড়েছে ঘরে চল মা
তোমার সুর্যসন্তান এই সন্ধ্যায় আসেনি তাতে কি
দেখো আগামীকাল ভোরে ঠিকটি চলে আসবে।