-মহারাজ। আপনি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
-হঠাৎ ঘুম ভাঙার মতই বললেন হ্যাঁ আমি পৃথিবীর মানুষ গুলোকে নিয়ে চিন্তিত। পৃথিবীর মানুষ যেভাবে বর্বর হচ্ছে, তাদের প্রেম শূন্য হৃদয় যেভাবে পাথরের আস্তরণের মত রূপ নিচ্ছে তাতে অতি শীঘ্রই পৃথিবী ধ্বংস হতে বাকি নেই। কিন্তু, আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে, আপনি থাকতে কেনইবা পৃথিবী প্রেম শূন্যে পরিণীত হচ্ছে।
-দেবীর কাছ থেকে প্রতি উত্তর হিসেবে ঠোঁটের কোণায় উজ্জ্বল হাসির রেখা দেখা গেল। তিনি আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলেন।
ইতিমধ্যে মহারাজের পাশে এসে দাঁড়াল দৈব বানীর দেবতা এপোলো। মহারাজ এবার প্রশ্নটি এপোলোকে লক্ষ্য করে বললেন। এপোলো তখন বলতে শুরু করল......
-মহারাজ, আপনি হয়তবা জানেন নিশ্চয়ই যে, মানব সমাজে রাজকুমারী সাইকি হল তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার মহনীয় রূপের কারণে মানুষ ছুটে যায় একনজর তাকে দেখার জন্য। এ রূপের কথা দেবী আফ্রোদিতির ও অগোচর ছিল না। মূলত, মর্তের পুরুষরা সাইকিকে মর্তের মানবী নয় স্বর্গের দেবী হিসেবে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে। এতে দেবী মনঃক্ষুণ্ণ হয়। এমনকি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, প্রণয় দেবী আফ্রোদিতি সাইকির ছদ্মরূপে মর্তে আবির্ভূত হয়েছেন। এতে করে প্রকৃত পক্ষে জনশূন্য হয়ে পড়ে দেবী আফ্রোদিতির মন্দির। অবশেষে দেবী একথা যখন জানলেন তখন মানুষদেরকে তার মন্দিরে ফিরিয়ে আনার জন্য কৌশলী হয়ে উঠলেন। তিনি তার পুত্র প্রেমের দেবতা কিউপিডকে সবিস্তারে বললেন। কিউপিডকে তিনি সাইকির উপর প্রেমতীর নিক্ষেপ করতে বলেন যেন সাইকি পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত চেহারায় পরিণীত হয়। অথবা তার শরীরে তীর নিক্ষেপ করে তার সামনে কুৎসিত প্রাণী রেখে দিতে যাতে করে সে ঘুম থেকে উঠে ঐ প্রাণীর প্রেমে পড়ে যায়। কিউপিড মায়ের কথামত চলে গেল সাইকির রাজ-প্রাসাদে। কিন্তু সমস্যা বাঁধল তীর নিক্ষেপের সময়। এমন সময় সাইকির ঘুম ভেঙে গেল। কিউপিড তীর নিক্ষেপ করতে যেয়ে সাইকির রূপের দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে সাইকির বাহুতে তীর নিক্ষেপ করল। ফলে কিউপিডের তীর সাইকিকে প্রেমাসক্ত করে তুলল। অবশেষে কিউপিড ও সাইকি একে অন্যের প্রেমে মগ্ন হয়ে গেল। একপর্যায়ে প্রেমকাতর কিউপিড ফিরে এসে সবকিছু খুলে বলল মা আফ্রোদিতিকে। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আফ্রোদিতি এবং সাইকিকে অভিশাপ দেন যে সাইকির রূপের সবাই মুগ্ধ হলেও কেউ সাইকিকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেনা এবং কিউপিড ও সাইকি একে অন্যের সাথে মেলামেশা করতে পারবে না। এর ফলে তাদের দুজনের প্রেম ভেস্তে গেল। দুজনের মধ্যে দুরুত্ব সৃষ্টি হল আকাশ-পাতাল। কিউপিড সিক্ত হৃদয়ে প্রতিজ্ঞা করল যতদিন না সাইকি অভিশাপ হতে মুক্ত হচ্ছে ততদিন সে পৃথিবীর কারও উপর প্রেমতীর নিক্ষেপ করবে না। আর সেদিন হতে তার প্রেম তীর নিক্ষেপ বন্ধ হওয়াতে পৃথিবীর মানুষ প্রেমশূণ্য হতে লাগল। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা কমে গেল। মানুষ হয়ে উঠলো বর্বর ও কঠিন। আর সেদিন হতে মানুষের বুক থেকে যতই প্রেম কমতে থাকলে ট্রানজিট অব হ্যাডেসের দেয়াল ততই শক্ত ও কালো হতে লাগল।
দীর্ঘক্ষণ দেবতা এপোলোর কাছ থেকে সবকিছু জানার পর গম্ভীরতা ভাঙলেন দেবরাজ
কিছুক্ষণ পর দেবী আফ্রোদিতি, কিউপিড ও সাইকি তিনজনই দেবরাজ জিউসের সামনে উপস্থিত হল। তখন দেবরাজ জিউস বললেন আফ্রোদিতিকে..........
-দেবী এগুলো যা শুনলাম তা কি সত্য?
-মহারাজ ভুল কিছু শোনেন নি। যা শুনেছেন তা সবই সত্য।
-কিন্তু তোমার এই অভিশাপের ফলে পৃথিবীর বুকে প্রেমহীন মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের কি কোন উপায় নেই? অথবা তুমি সাইকিকে কি কোনভাবে ক্ষমা করতে পার না।
-উত্তরে দেবী বললেন, একটা কাজ করতে পারলে আমি সাইকিকে ক্ষমা করে দেব। তখন দেবী সাইকিকে তিনটা শর্ত পূরণ করার কথা বললেন।
-তখন দেবরাজ জিউস সাইকিকে জিজ্ঞাসা করল যে, সে দেবীর শর্তে রাজী আছে কি না?
-সাথে সাথে সাইকি দেবরাজ জিউসের প্রশ্নের উত্তরে সম্মতি প্রকাশ করল। এবার সাইকি মুখোমুখি হল তিনটি কঠিন শর্তের সামনে। প্রথম শর্ত হলো সাইকিকে একটি ঝুড়িতে রাখা কয়েক প্রকারের ডালের মিশ্রণ রাত শেষ হওয়ার আগে প্রত্যেকটা ডাল আলাদা করতে হবে। সাইকি কিছু পিঁপড়ার সাহায্যে সাইকি দ্রুত করে ফেলল। দ্বিতীয় শর্তে সাইকিকে বলা হলো সহস্রাধিক ভেড়াদের মধ্য থেকে একটি সোনালী ভেড়ার কাছ থেকে সোনালী পশম আনতে হবে। এবার সোনালী পশম আনতে সাইকিকে সাহায্য করল ঈগল। ভেড়া গুলো যখন ঘুমিয়ে পড়ল তখন ঈগল চুরি করে সাইকিকে সোনালী পশম এনে দিল। এবার শেষ শর্তে সাইকিকে দেবী বলল যে, ছেলের চিন্তায় তার রূপ কমে গেছে। তাই পাতালের দেবী পার্সিফোনের কাছ থেকে ছোট বাক্সে করে কিছু রূপ আনতে হবে। কিন্তু এ কথা শোনার সাথে সাথে সাইকির মাথায় যেন বজ্রপাত পড়ল। সে কিভাবে পাতালের দেবী পার্সিফোনের কাছ থেকে রূপ আনবে? সে তো দেবী না। আর জীবিত মানবরা তো পাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। অবশেষে সে দুঃখে, অপমানে পাহারের চূড়ায় উঠল আত্মহত্যা করার জন্য। এমন সময় বায়ুর দেবতা জেফারাইস তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। তিনি সাইকিকে জীবিতাবস্থায় কিভাবে পাতালে যেতে হয় সে পথ বলে দিল। তখন সাইকি খুশি মনে পাতালের দেবী পার্সিফোনের কাছ থেকে রূপ এনে দেবী আফ্রোদিতির কাছে দিল।