আমাদের পরবর্তী সংখ্যায় লেখা পাঠাতে চাইলে আমাদের ফেসবুক পেজ এ ইনবক্স করুন অথবা ইমেইল করুন Ghuri2014@hotmail.com এই ঠিকানায়।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৫

এয়ার এম্বোলিজম - শাওন খান (৩য় সংখ্যা)

-"আমি এখন তোদের একটা করে নুড ফটো তুলব তারপর তোদের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করব এটাই হবে তোদের শাস্তি" বলেই কৌশিক আবীরকে বললো, "সবকয়টার প্যান্ট খোল"।  তারপর শ্রাবণীকে বললো, "তুই একটু পাশের রুমটায় যা তো"
শ্রবণী পাশের ঘরে যেতেই কৌশিক ও আবীর চেয়ারে বাঁধা রিমন, শাকিল ও আলিফের বেল্ট খুলতে শুরু করলো চেয়ারে বাঁধা থাকায় প্যান্ট খুলতে একটু দেরিই হলো এবার কৌশিক পকেট থেকে মোবাইল বের করে তিনজনেরই কয়েকটা করে শুধুমাত্র নগ্ন অংশটুকুর ছবি তুললো এরপর আবার তাদের প্যান্ট লাগিয়ে দিলো কৌশিক শ্রাবণীকে ডেকে একটা চেয়ার টেনে চেয়ারে বাঁধা তিনজনের সামনে বসলো 
.
-"এখন তোরা তোদের ফেসবুকের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড বলবি"।  কৌশিক রিমনের মুখ থেকে স্কচটেপ খুলতেই কাঁদো-কাঁদো গলায় বলতে শুরু করলো, "ভাইয়ারা, আমাদের ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও, প্লিজ"! কৌশিক আবারও স্কচ টেপ লাগিয়ে দিয়ে বললো, "ধ্যাত, এইসব আউল-ফাউল প্যাঁচাল আর ভালো লাগে না! তোর না খুব শখ শ্রাবণী হাতের পরশ পাওয়ার! শ্রাবণী প্লায়ার্সটা নিয়ে ওর কানের সামনের চুলগুলোতে একটু আদর করে দে তো"! শ্রাবণী প্লায়ার্সটা দিয়ে রিমনের কানের কাছের চুলগুলোতো অসম্ভব জোরে টান দিলো সাথে সাথে রিমন কেঁপে ঝাঁকি দিয়ে গোঙাতে শুরু করলো রিমনের মনে হচ্ছে কানের দিকের চামড়াগুলো উঠে যাচ্ছে! দাঁত খিচে ব্যথাটা উপশম করার চেষ্টা করতেছে আবীর রিমনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল -শ্রাবণী তুই না কেমন যেন পাষাণ! তোর এত সাধের প্রেমিককে এত অল্প আদর করলি?
শ্রাবণী রিমনের গালে হাত রেখে বললো, "তাই জানু? আদর কম হয়েছে? ইশ! আমার জানুকে আমি এত কম আদর করতে পারি"? বলেই সে প্লায়ার্স দিয়ে রিমনের কানের কাছের একটুখানি চুল চেপে ধরল তারপর প্লায়ার্সটাকে ঘুরাতে শুরু করল রিমন অমানুষিক যন্ত্রণায় কাঁপতে লাগলো! চোখ-মুখ খিচে গোঙাতে লাগলো সে কান দিয়ে শুধু শো-শো শব্দ শুনতে লাগল শ্রাবণী হেসে বললো, "ডার্লিং, আদর কম হয়ে যাচ্ছে?" বলে আরো জোরে ঘুরাতে লাগল সে আরো গোঙাচ্ছে হাত-পা চেয়ারের সাথে বাঁধা থাকায় নড়তে পারছে না শুধু ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো সেটা দেখে শ্রাবণী আরো ঘুরাচ্ছে শ্রাবণীর গোলাপি ঠোটে এখন ক্রুর হাসি রিমনের যন্ত্রণায় তার হাসি কেমন যেন পৈশাচিক হয়ে যাচ্ছে এবারে প্লায়ার্সটা আরো ঘুরে গেল! রিমনের চোখের কোণা দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো এখন সে আর শ্রাবণীর হাসি শুনতে পারছে না শুধু শো-শো শব্দ শুনছে অবশেষে শ্রাবণী প্লায়ার্সটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে সরিয়ে নিলো রিমন ঝাঁকি দিয়ে উঠল তার দু-চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে! কৌশিক রিমনের চোখ থেকে চোখ ফিরিয়ে বাকি দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, "কিরে শ্রাবণী, তোর বাকি দুই বলদ প্রেমিক কি দোষ করলো?" কৌশিকের কথা শেষ হতেই আলিফ ও শাকিল শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে আতঙ্কভরা চোখে মাথা দোলাতে লাগল তাদের আতঙ্কে শ্রাবণীর শরীরে যেন যমের শক্তি চলে আসে! শাস্তিও হলো অনেকগুন বেশি!
এবার স্কচটেপ খুলে দিলে আর কেউ কোন শব্দ ব্যয় করল না যে যার ই-মেইল এড্রেস, পাসওয়ার্ড বলে দিলো আবার তাদের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেওয়া হলো!
শাকিল আর আলিফ শ্রাবনীর অমানুষিক অত্যাচারে নেতিয়ে পরলে আবীর হাসতে হাসতে বলছে, "কিরে, টায়ার্ড হয়ে গেলি? সিগারেট খাবি? কৌশিক, সিগারেট দে তো"।  কৌশিক পকেট থেকে সিগারেট বের করে একটা আবীরকে দিলো, সে নিজেও একটা নিলো শ্রাবণী বলল, "আমাকে দে একটা"! শ্রাবণীও একটা সিগারেট ধরালো আবীর সিগারেট টেনে শাকিল, রিমন ও আলিফের মুখে ছাড়তে ছাড়তে বলল, "সিগারেট খাবি? বেনসনের নতুন ফ্লেবার ফাইন কাট! আরে ইয়ার কৌশিক, এ্যাসট্রে তো নাই"!
.
-এ্যাসট্রে কি দরকার? সিগারেট টেনে ওদের বাঁধা হাতের উপর রাখ এই হারামির বাচ্চারা, হাত থেকে সিগারেট পরলে হাত কেটে ফেলব" বলেই কৌশিক জ্বলন্ত সিগারেটটা শাকিলের বাঁধা হাতের উপর ধরলো শাকিলের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল শ্রাবণী সিগারেটে একটা টান দিয়েই কাঁশতে শুরু করলো "নাহ, সিগারেট আমার দ্বারা সম্ভব না! তুই খা!" বলেই সে সিগারেটটা আলিফের বুকের শার্ট খুলে সেখানে চেপে ধরলো! মাংস-পোড়ার কটু গন্ধ নাকে লাগার সাথে সাথে শাকিল আর আলিফ কষ্টে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠায় চেয়ারের শব্দ শোনা যাচ্ছে আবীর রিমনের দিকে তাকাতেই দেখল সে উশ-খুশ করছে, সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে, চোখদুটো অসম্ভব লাল, হাত-পাগুলো কাঁপছে! আর কিছুক্ষণ পরপরই সে খিঁচুনি দিয়ে উঠছে আবীর কৌশিকের দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে বলল, "দোস্ত কাজ হয়েছে"! কৌশিক শাকিলের শরীরে সিগারেট আরো জোরে চেপে ধরে নিভিয়ে ফেলল শ্রাবণীও তাই করল কৌশিক বলল, "শূয়রের বাচ্চারা, ভাল করে শোন কিছুক্ষণ আগে তোদেরকে যে ইনজেকশন পুষ করেছিলাম, সেটা ছিল প্যাথেড্রিন কিন্তু আমি তো ডাক্তার না তাই একটু ভুল করে ফেলেছি ইনজেকশন পুষ করার সময় প্রায় বিশ মিলি বাতাস ঢুকিয়ে দিয়েছি এখন কি করি বল তো?" কৌশিকের কথা শুনে চেয়ারে বাঁধা তিনজনেরই চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেল! কৌশিক আবারও বলতে শুরু করল, "এখন, তোরা যদি বেলুন হইতি, তাহলে না হয় ফুঁটা করে সব বাতাস বের করে দিতাম সেটা তো আর সম্ভব না এখন এয়ার এম্বোলিজম থেকে বাঁচার জন্য তোদের হাতে শুধু কয়েকটা মিনিটই আছে"।  কৌশিকের কথা শেষ হতে ওরা তিনজনই নড়তে শুরু করল কৌশিক জোরে ধমক দিয়ে বলল, "থাম এখন আমি তোদের খুলে দেবো এয়ার এম্বোলিজম থেকে বাঁচার জন্য হয়তো দশ মিনিট সময় পাবি যদি বাঁচতে পারিস বাঁচবি যদি কোনভাবে বাতাস তোদের ফুসফুসে চলে যায়, তাহলে কেল্লা ফতে! আবীর ওদের হাত খুলে দে ওদের ফোনগুলোও নিয়ে ভেঙে ফেল আর যদি কোন শূয়রের বাচ্চা এই ঘটনা কাউকে জানাইছিস, তাহলে সেদিন কোন গোরস্থানে একটা কবর খুড়ে রাখতে বলিস"
ওদের বাঁধন খুলে দিতেই তিনজনই টলতে টলতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল শ্রাবণী বলল, "আবীর, ওরা যদি বেঁচে যায়"!
-চান্স নাই দেখিস নাই, তিনটারই কেমন খিঁচুনি শুরু হয়ে গিয়েছে এখান থেকে যে কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতে পনের-থেকে বিশ মিনিট সময় লাগবে ততক্ষণ টিকবে বলে মনে হয় না তার উপর দেখলিই তো প্যাথেড্রিনের প্রভাবে কেমন ঢুলছিল"!
-আর যদি ইনকোয়ারীতে ধরা পরি
.
-সুযোগ নাই প্যাথেড্রিন পুষ করা আছে ফেসবুকে আপলোড করা ন্যুড ফটোতে ক্যাপশন দেওয়া আছে- অসাম পিনিক স্বাভাবিকভাবে সবাই ধরে নিবে প্যাথেড্রিন পুষ করতেই বাতাস ঢুকে গিয়েছে আর এয়ার এম্বোলিজমে মারা গিয়েছে"!
কৌশিক রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আবীর জিজ্ঞাসা করল, "কই যাস"?
-রুদ্রের কাছে
-থাম আমরাও যাবো
রুদ্র ওদেরই বন্ধু কৌশিক, আবীর, শ্রাবণী আর রুদ্র এই চারজন ছোট থেকেই একসাথে বড় হয়েছে পাশাপাশি বাসা এবং একই সাথে পড়াশুনা কাকতলীয়ভাবে ওরা চারজনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল কৌশিক এ্যাপ্লাইড ফিজিক্স, রুদ্র কম্পিউটার সায়েন্সে, আবীর মাইক্রোবায়োলজি আর শ্রাবণী ফার্মাসীতে কিন্তু ভার্সিটির ওপেনিং ডে'র পরেরদিনই রুদ্র ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে পরে জানা যায়, রিমন, শাকিল ও আলিফ এই তিনজন মিলে রুদ্রকে র্যাগিং করে একটু রগচটা স্বভাবের হওয়ায় রুদ্র নাকি একটু তর্কও করেছিল যার ফলাফলটা হয়েছিল আরো খারাপ ওরা রুদ্রকে ভার্সিটির হলের ভিতরে নিয়ে যায় সেখানে তাকে মার-ধরসহ বিবস্ত্র করে নাচিয়েছিল সেই দৃশ্যটাকে আবার ক্যামেরায় ধারনও করা হয়েছিল এই অপমান সহ্য করতে না পেরেই রুদ্র আত্মহত্যা করে রুদ্রর পরিবার থেকে মামলাও করা হয় কিন্তু রিমন এক প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে তার উপর ভার্সিটির উঠতি ক্যাডার হওয়ায় মামলাটা শেষ পর্যন্ত ধামাচাপা পরে যায় এই ঘটনার পরই কৌশিক, আবীর ও শ্রাবণী ওদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্রাবণী তিনটি অবৈধ সিম ব্যবহার করে ওই তিনজনের সাথে ফোনে কথা বলতে শুরু করে আস্তে আস্তে তারা তিনজনই শ্রাবণীর মায়ার জালে ফেঁসে যায় এরপর সুযোগ বুঝে একইদিনে বিভিন্ন সময়ে তিনজনকে পূর্ব-নির্ধারিত জায়গায় ডেকে নিয়ে যায় তারপর শুরু হয় তাদের প্রতিশোধের উন্মত্ততা
কৌশিক, আবীর ও শ্রাবণী রুদের কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে ওদের তিনজনেরই হাতে সাদা গোলাপ সাদা গোলাপ রুদ্র খুবই পছন্দ করতো কৌশিকের চোখে পানি সে হাঁটু গেড়ে বসে কবরের উপরে ফুলগুলো রেখে বিড়বিড় করে বলল, "প্রতিশোধ নিয়েছি দোস্ত, প্রতিশোধ নিয়েছি ঠিক যে কষ্টটা তুই পেয়েছিস, সেই একই কষ্ট ওদেরকেও দিয়েছি তোর অপমানের শোধ নিয়েছি তোর আঘাত প্রতিটাই ফিরিয়ে দিয়েছি একটু বাতাসের জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিলি, সেই একটু বাতাসই ওদের মৃত্যুর কারণ আমরা প্রতিশোধ নিয়েছি দোস্ত প্রতিশোধ নিয়েছি"।  কৌশিক তার ঘাড়ে শ্রাবণী ও আবীরের হাতের স্পর্শ পেল তারা ওকে টেনে তুললো চলে যাওয়ার সময় তিনজনের মন থেকে আশীষ ঝরে পড়ল, "দোস্ত, ভাল থাকিস তোকে খুব মিস করবো"